খেরসনের প্রধান শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন করেছে রাশিয়া। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার সকালে এ ঘোষণা দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সকল সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম দনিপার নদীর পূর্ব পাশে নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে খেরসন অঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চল বা প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা এখন বিনাবাধায় ইউক্রেন দখলে নিতে পারবে।
এর আগে বুধবার খেরসন শহর থেকে পিছু হটার ঘোষণা দেয় রাশিয়া। দনিপার নদীর উপরে থাকা একমাত্র সেতুটি উড়িয়ে দিয়েছে ইউক্রেন। ফলে ফেরির মাধ্যমে নদীর পশ্চিম প্রান্তে রসদ সরবরাহ করতে হচ্ছিল রাশিয়াকে। সামনে শীত আরও বাড়লে এই সরবরাহ অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে যেত। তাই সুবিধাজনক সময়েই সেনা সরিয়ে নদীর পূর্ব প্রান্তে নিয়ে আসার কথা ঘোষণা করেন রুশ জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন। তার এই প্রস্তাব অনুমোদন করেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শইগু।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার জানিয়েছে, মস্কো সময় সকাল পাঁচটার আগেই তাদের সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়েছে। নদীর ওইপাশে থাকা সামরিক সরঞ্জাম এবং সকল সেনাকে নদীর পূর্বপ্রান্তে খেরসনের বাকি এলাকা প্রতিরক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে।
গত সেপ্টেম্বর মাসে এক গণভোটের পর খেরসনকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যদিও ওই গণভোটকে স্বীকৃতি না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো।
ভোটের সময় খেরসনের পুরো অঞ্চলই রাশিয়ার অধীনে ছিল। তবে দনিপারের পশ্চিম পাড় থেকে সেনা প্রত্যাহারের ফলে এখন এই অঞ্চলের ২০ শতাংশ এলাকা ইউক্রেন বিনা যুদ্ধে দখল করে নিতে পারবে। রাশিয়ার দখলে খেরসনের বেশিরভাগ এলাকা থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ খেরসন শহর রয়েছে নদীর পশ্চিম প্রান্তেই। ফলে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহারকে এই যুদ্ধে রাশিয়ার জন্য সবথেকে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেন আক্রমণের পর অনেকটা বিনাবাধায়ই খেরসন দখল করেছিল রাশিয়া। খেরসনের কর্মকর্তারাই রাশিয়ার হাতে খেরসনকে তুলে দিয়েছিল। এই রুশপন্থী কর্মকর্তাদেরই আবার পরে খেরসনে নিয়োগ দেয় রাশিয়া। তবে গত তিন মাস ধরে খেরসন পুনরুদ্ধারে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। প্রথম দুই মাসে রাশিয়ার কাছ থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম উদ্ধারে সফল হয় ইউক্রেনের সেনারা। এরপর গত এক মাস ধরে রুশ সেনারা সেখানে প্রতিরোধ ধরে রাখতে সফল হচ্ছিল। এমনকি কিছু অঞ্চলে তারা আবারও ইউক্রেনীয়দের হটিয়ে দিতে শুরু করেছিল। ঠিক এরকম সময়েই রুশ সেনাদের খেরসন থেকে প্রত্যাহার অনেককে বিস্মিত করেছে। রুশ সামরিক ব্লগাররা একে গোপন চুক্তির অংশ বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছে।
ইউক্রেনের তরফ থেকে বারবার বলা হয়েছে এটি রাশিয়ার একটি ফাঁদ হতে পারে। তারা সেনা প্রত্যাহারের নাটক সাজিয়ে ইউক্রেনীয়দের খেরসনে সর্বাত্মক হামলা চালানোর জন্য প্রলুব্ধ করছে। যদিও গত দুইদিনে রুশ সেনাদের সেনা প্রত্যাহারের বেশ কিছু ফুটেজ প্রকাশিত হয়েছে। অবশেষে শুক্রবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হলো।












