ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার বইয়ে ভয়াবহ মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিচারপতি মানিক এ মন্তব্য করেছেন। বিচারপতি মানিক আরও বলেন, ড. ইমতিয়াজ বইটিতে মিথ্যার ছড়াছড়ি ছিটিয়েছেন। প্রথমে বইতে কোথাও বঙ্গবন্ধু শব্দটি লিখেননি। ৪০ পৃষ্ঠায় তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু নাকি ৭ই মার্চের ভাষণ শেষ করেছিলেন ‘জয় পাকিস্তান’ বলে। এটা ভয়াবহ মিথ্যাচার। বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি জাতিসংঘে স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ওখানেও লেখা রয়েছে, তিনি জয় বাংলা বলে ভাষণ শেষ করেছেন। আবার তিনি শহীদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। এই বই দেখার পরে জাতিসংঘও বিচলিত হবে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণহত্যা সেন্টারের পরিচালক।
তার এমন লেখায় জাতিসংঘে প্রশ্ন জাগতে পারে, তাহলে কোনটা সত্য? এটা মারাত্মকভাবে প্রভাব পড়তে পারে। দায়িত্বশীল লোক হয়ে এমন মিথ্যা তথ্য দিলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়ানো। যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার অংশ। তাই ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বইটি পড়লে কোনো মানুষই তাকে (অধ্যাপক ইমতিয়াজ) মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক বলবে না। তিনি বলেছেন, আসলে পাকিস্তানি এক মহিলার অনুরোধে তিনি বইটি লিখেছেন। এতে পরিষ্কার যে, তার বইটি একটি মহলকে খুশি করার জন্য লেখা হয়েছে। এতে মিথ্যার ফুলঝুড়িতে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বইটি পুরোটাই উদ্দেশ্যমূলক। বঙ্গবন্ধু ও শহীদদের খাটো করার জন্যই এ বই লেখা হয়েছে। তিনি নাকি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যটি নিজে শুনেছেন। এখানে প্রশ্ন হলোÑ তখন ইমতিয়াজের বয়স ছিল ৮ বছর। তাহলে এই বয়সে তিনি রেসকোর্স ময়দানে গেলেন কীভাবে। বইতে তিনি বলেছেন বঙ্গবন্ধু নয় মাস পাকিস্তানে ছিলেন তিনি নাকি জানতেনও না বাংলাদেশে কী হচ্ছে। এবং দেশে ফেরার পর চাটুকারদের কথায় কাজ করেছেন। তিনি লিখেছেন পাকিস্তানি সৈন্যরা নাকি ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এটা চরম ও ক্ষমার অযোগ্য মিথ্যা কথা। স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। বইতে বলা হয়েছে যুদ্ধটি নাকি শেষ হয়েছিল ভারত- পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ নয়। এই কথাটি কিন্তু পাকিস্তানের বন্ধু জামায়াত সব সময় বলে আসছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা রাষ্ট্রদূতদের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেখুন সুষ্ঠু নির্বাচন হোক এটা আমিও চাই। কিন্তু এ দাবি আমাদের দেশের মানুষের দাবি হতে হবে। এটা বিদেশিরা ঠিক করার কে? আমাদের দেশের বিষয়, দেশের মানুষই ঠিক করবেন, কী হবে, কী হবে না। তারা যেন নাক না গলান? বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে রাষ্ট্রদূতদের নাক গলানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। জাতিসংঘ সনদের ব্যত্যয়। সুতরাং নির্বাচন নিয়ে কোনো অবস্থাতেই আমরা তাদের নাক গলানো পছন্দ করি না। আমার মনে হয় তাদের এই বিষয়ে থেকে সরে আসা উচিত। যেন কোনো অবস্থাতেই আমাদের দেশের রাজনীতির বিষয় নিয়ে তারা কথা না বলেন।
বিচারপতি মানিক আরও বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমি কোনো সংকটই দেখছি না। বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, তাদেরতো আর জোর করে আনা যাবে না। বিএনপি একটা পর্যায়ে ভুল বুঝে নির্বাচনে আসবে। সুতরাং বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে, নির্বাচন থেমে থাকবে না। এখানে জাপার মতো আরেকটি শক্তিশালী বিরোধীদল রয়েছে। তাদের নিয়েই নির্বাচন হবে।
নিজের ওপর হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বহুবার হামলার শিকার হয়েছি। ২০১১ সালে কর্নেল তাহের হত্যা মামলার রায়ে আমি জিয়াউর রহমানকে ‘ঠাণ্ডা মাথার খুনি’- বলেছিলাম। এরপর থেকেই একটি পক্ষ আমার পিছে লেগে আছে। এবং আমার প্রতি তাদের আক্রোশ আছে। এ জন্য আমার উপর হামলা হয়। হামলা তখনও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তারা যখনই সুযোগ পায় তখনই হামলা চালায়। এ নিয়ে আমি বিচলিত নই।
তিনি বলেন, আমি কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হইনি। আর হবোও না। আমি কখনো আওয়ামী লীগ করিনি। তবে আমি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতাম। আমি মুক্তিযুদ্ধর স্বপক্ষে কথা বলি, সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াই এবং আমার কাজের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নীতির মিল আছে। এজন্য অনেকে ভাবে আমি আওয়ামী লীগ করি। এটা আসলে ভুল ধারণা। আসলে যারা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশকে এখনো মেনে নিতে পারেনি, তারাই আমার বিরুদ্ধে। ধর্মান্ধ ও মৌলবাদী গোষ্ঠীই আমার পিছে লেগে থাকে। তারা যখনই সুযোগ পাচ্ছে। তখনই আমার ওপর আক্রমণ করছে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন স্বচ্ছ হয়েছে। মমতাজ ও দুলাল সাধারণ আইনজীবীদের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু যারা ভেবেছিল যে, তারা নির্বাচন করে জয়ী হতে পারবে না, তারাই হট্টগোল ভাঙচুর চালিয়েছে। নির্বাচন নস্যাৎ করাই তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু তাদের আশা পূরণ হয়নি। এজন্য তারা এখনো একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। ফকির দুলালের কমিটি বৈধ কমিটি। উপযুক্ত ভাবে তারা নির্বাচিত হয়েছে।