দলীয় সরকারের অধীনে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত হয় না, এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা
প্রবর্তনের যৌক্তিক দাবিতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলসহ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাজপথে রক্ত দিয়েছে এবং জনগণকেও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে। এই ইস্যু সমাজকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছিল। এখন ক্ষমতায় থেকেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ‘নৈতিক দাবীর’ বাধ্যবাধকতা মেটানোর পক্ষে আওয়ামী লীগ কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না।ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এত মানুষের আত্মহুতি, এত ধ্বংসযজ্ঞের দায় অস্বীকার করা খুবই মর্মান্তিক।
নির্বাচনবিহীন রাজনীতি অর্থাৎ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন জলাঞ্জলি দেয়ারই নামান্তর।
দল নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রতি এক সময় আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি, অঙ্গীকার ও শর্তহীন আনুগত্য ছিল।
বিচারপতি কে এম হাসান কোন এক সুদূর অতীতে বিএনপির সাথে যুক্ত ছিলেন, তাই তাঁর অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না, ফলে আওয়ামী লীগ তাঁকে মেনে নেয়নি। সেই আওয়ামী লীগই এখন বিশ্বাস করে দলীয় সরকারের অধীনেই এবং দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে। এতে যে ‘স্বার্থের সংঘাত’ বিদ্যমান তা জনগণ বুঝলেও সে কথাটি আওয়ামী লীগ সরকার বেমালুম ভুলে গেছে। এটা নৈতিকতার পক্ষে আত্মঘাতী।
বিরোধী দলে থাকলে ‘নিরপেক্ষ’ আর ক্ষমতায় থাকলে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন এ দ্বিমুখী রাজনীতি রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের শেষ কিনারে নিয়ে গেছে। নৈতিক সংকটের এই আত্মবিধ্বংসী খেলা রাষ্ট্রে অব্যাহত থাকতে পারে না। ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের অজুহাতে আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা, জাতির কাছে দেয়া অঙ্গীকার সব পরিত্যাগ করেছে।
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কীভাবে ভোটাধিকার নিশ্চিত করা যায়, কী পন্থায় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায় বা সংবিধানে কী নতুন ব্যবস্থা সংযোজন করা যায় সে বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোন রাজনৈতিক বা আইনগত উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।