মানিক সাহা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। দেশ ভাগের সময় তার বাবা মাখন লাল সাহা বন্ধু নুরুল ইসলামের সঙ্গে বাড়ি অদল-বদল করে চলে যান ভারতে।
এখনও তার পৈতৃক ভিটার স্মৃতি চিহ্ন রয়েছে। সে স্মৃতি ধরে রাখতে এখনও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের টি এ রোডের বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মাখন লাল সাহার নামেই দিয়ে যাচ্ছে মালদার পরিবারের লোকজন।
সে সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রয়াত নূরুল ইসলামের ছেলে শরীফুল ইসলাম মালদার বলেন, আমার বাবা ভারতের আগরতলা থেকে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে লেখাপড়া করতেন। লেখাপড়ার কারণে শহরের কিবরিয়া মহলের একজনের বাসায় থাকতেন তিনি। কলেজে পড়ার সময় মানিক সাহার বাবা মাখন লাল সাহার সঙ্গে আমার বাবা নূরুল ইসলামের বন্ধুত্ব হয়। এরপর দেশ ভাগের সময় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হতে থাকে। তখন দুই বন্ধু একে অপরের বাড়ি বিনিময়ের প্রস্তাব করেন। পরে দুই পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে একে অপরের বাড়ি বদল করে ফেলেন। আমরা তখন আগরতলার বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলে আসি। তারাও তাদের জিনিসপত্র নিয়ে আগরতলায় চলে যান। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তাদের কিছু পুরানো স্মৃতি লুট হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন বাংলাদেশে আসি, বাড়িটি ছিল ২৪ শতাংশের ওপর। বিদ্যুৎ লাইন একটি। আমার বাবা মৃত্যুর সময় আমাদের বলে গিয়েছিলেন, মাখন ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে তো চলে গেছে। তবে বিদ্যুৎ বিলটা তার নামে রাখিস। এরপর আমাদের বাবা-চাচাদের সম্পত্তি ভাগ হয়ে গেলেও আমার এক চাচা এখনও মাখন লাল সাহার নামে বিদ্যুৎ বিল দিয়ে আসছেন। ৬০/৭০ বছর হয়ে গেলেও এখনও আমাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিবছর একবার হলেও মাখন লাল সাহার পরিবারের লোকজন আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসেন। আমরা প্রতিবছর দুর্গা পূঁজার সময় তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই।
আমাদের সবার কাছে বড় গর্বের বিষয় হলো- এ বাড়িতে জন্ম নেওয়া ছেলেটা এখন আগরতলার মুখ্যমন্ত্রী। এটা বিশাল পাওয়া। আমাদের এ সম্পর্ক সব সময় অটুট থাকবে। আমরা দোয়া করি, মানিক সাহা একদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন, যোগ করেন শরীফুল।
শরীফুলের চাচাতো বোন সালমা বেগম বলেন, আমাদের চাচাদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ হয়ে গেলেও আমার বিদ্যুৎ বিল মাখন লাল সাহার নামেই দেই। আমার বাবা বলে গেছেন, তার (মাখন লাল) স্মৃতি চিহ্ন ধরে রাখতে।
স্থানীয় বাসিন্দা রমন সাহা বলেন, আমরা ছোট বেলায় মাখন সাহার বাড়িতে অনেক খেলাধুলা করতাম, তখন মাখন সাহা যাদু দেখাতে পারতেন। যাদু দেখার জন্য অনেকেই তাদের বাড়িতে ভিড় করত। যে কয়েকটা বাড়িতে দুর্গা পূঁজা হতো, তার মধ্যে তাদের বাড়িতে আনন্দ উৎসব বেশি হতো। এখন শুনেছি, এ বাড়ির ছেলে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। শুনে অনেক আনন্দ লেগেছে।
ফারুক আহমেদ পারুল বলেন, আমরা ছোট বেলা থেকে শুনেছি, ওই বাড়িটি এক সময় মাখন লাল সাহার ছিল। দেশ ভাগের সময় তারা রদবদল করে চলে যান। তবে এ বাড়ির ছেলে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় পাড়ার সবাই খুশি।












