এ.জেড রুমানঃ শ্রীবরদী উপজেলার মনমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি পাহাড়ি জনপদের নাম হাড়িয়াকোনা। সিংগাবরুনা ইউনিয়নের এই পাহাড়ি গ্রামে রয়েছে অর্ধশত টিলা ভূমি, আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুই হাজার মানুষের বসবাস । এই গ্রামের অসম্ভব সুন্দর দুর্গম পাহাড়ি পথ মনকে নিয়ে যায় স্বপ্নযাত্রায়, আর জল বুকে নিয়ে খাল যেন পাহাড়ের বুক চিরে রেখা একে গেছে , তিনটি স্থানে আপন সৌন্দর্যে ঝড়ছে পাহাড়ি ঝরনা। ঝরনার বুকে জেগে উঠেছে চিকচিক বালুর চর। প্রাথমিক, উচ্চ, মিশনারী বিদ্যালয় রয়েছে এখানে । রয়েছে গীর্জা। ছোট্ট খেলার মাঠটিও দারুন । এক কথায় মন হারানোর একটি পাহাড়ি গ্রাম । কিন্তু মন হারানোর এই পাহাড়ি গ্রামের আদিবাসী ভাই বোনদের দীর্ঘদিনের মনোকষ্টের কারন ঝুকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা। অথচ জীবিকা তাদের কৃষিনির্ভর। এখানকার উৎপাদিত সবজি, কৃষিপণ্য স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হয় ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু পণ্য পরিবহনে সাইকেল, ভ্যানগাড়ি, সিএনজি, মোটরসাইকেল ব্যতিত অন্য কোন যানবাহনই ব্যবহার করা সম্ভব হয়ে উঠেনা তাদের জন্য। এগুলোর ক্ষেত্রেও ঝুঁকি নিতে হয়। বর্ষা এলেতো বেগতিক অবস্থা! দূর্ঘটনার শিকার হতে হয় মাঝেমধ্যেই। কম নয়, গভীর অরণ্যের এই মায়াবী গ্রাম থেকে ৬ কিলোমিটারের দীর্ঘ কাঁচা সড়ক। সড়কের ভঙ্গুরতা রিতীমত ভোগান্তিতে ফেলে স্কুলগামী ছাত্রছাত্রীদের, এনজিও কর্মীদের, টহলরত বিজিবি সদস্যদের। আশেপাশের গ্রামগুলোর সাথে স্বাভাবিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বাধা এই ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত । যার দরুন কৃষি নির্ভর এই পাহাড়ি গ্রামে আসা ক্রেতা বিক্রেতারাও ভোগান্তির শিকার হন। আর অসুস্থ রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্তে জটিলতা কতটা দুর্বিষহ হয়, ভাবা যায়না ….!! এটা দীর্ঘদিনের ভোগান্তির গল্প…….. তবে দীর্ঘদিনের এই ভোগান্তি নিরসনে দুটি কাঠের সাঁকো নির্মানের এক নতুন গল্প রচিত হয়েছে মায়াবী গ্রামটিতে। গল্পটি অন্যরকম এজন্যই কারন ভোগান্তিটা দীর্ঘদিনের। উপজেলা প্রশাসনের আর্থিক সহায়তায় ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশন ও কারিতাসের সহযোগিতায় আদিবাসী অধ্যুষিত পাহাড়ি গ্রামটির যাতায়াতের পথের দুটি স্থানে কাঠের সাঁকো নির্মান করা হয়েছে। উদ্যোগটিতে অন্যমাত্রা যোগ করেছে গ্রামবাসীর অনবদ্য ভুমিকা । কাঠের সাঁকো দুটি নির্মানে আনন্দিত গ্রামবাসী স্বতস্ফুর্তভাবে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়েছেন। সাঁকো দুটি শতশত মানুষের ভোগান্তির অবসান ঘটাবে। ছোট যানবাহন, পথচারীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সহায়ক হবে।
জানা যায়, জনগুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি গ্রামটির সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে ভোগান্তির শিকার গ্রামবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে শ্রীবরদীর মানবিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা আক্তার আর্থিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ও কারিতাসের সুফল প্রকল্পের বিভিন্ন ক্লাস্টারের সদস্যদের সহযোগিতায় গ্রামবাসীদের স্বেচ্ছাশ্রমে ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়। উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা প্রত্যাশিত সাঁকো দুটির নির্মাণের ক্ষেত্রে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। শ্রীবরদীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুরো উদ্যোগটিকে অসম্ভব ভাল লাগার কাজ উল্লেখ করে জানিয়েছেন, ” শেষ হলো ভালো লাগার আরেকটি কাজ। সিংগাবরুনা ইউনিয়নের হাড়িয়াকোনা গ্রামে পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বসবাস। কাজের সূত্রে অনেকবার যাওয়া হয়েছে সেখানে জানা হয়েছে তাদের সংগ্রামী জীবনগাথা। একদিকে দুর্গম পাহাড়ি পথ আরেকদিকে খাল পাড় হয়ে পন্য পরিবহনসহ যাতায়াত। দীর্ঘদিনের দাবী ছিল দুটি ব্রীজের কিন্তু সেটা বাস্তবায়নে হয়তো আরো কিছু সময় লেগে যেতে পারে। সবসময় ভাবনায় ছিলো কিভাবে তাদের এই কষ্ট লাঘব করা যায়। অবশেষে দুটি কাঠের সাকো( রেলিং এর কাজ চলমান) নির্মাণ করে দেয়া গেল আর সাময়িক হলেও পরিত্রাণ পেলো শতাধিক পরিবার “