আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে। বাঙালির কাঙ্ক্ষিত মুক্তি সংগ্রামে বিজয় অর্জনের মাস ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাস এলেই হৃদয়ে এক ধরনের শিহরণ অনুভব করি। ডিসেম্বর মাস বাঙালি জাতির আত্ন-পরিচয় আর বিজয় অর্জনের মাস। বাঙালি জাতির আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে কখনো স্বজাত্য স্বাধীনতার আস্বাদ পায়নি। এই ভূ-খন্ডের বহু মানুষের রক্ত স্রোতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার জল রাশি লাল হলেও অন্ধকার ভেদ করে সূর্যের আলো কখনও আসেনি।
তৎকালীন সময়ে গোপালগঞ্জ মহুকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া নামক এক নিভৃত পল্লী জননীর বুকে স্বাধীনতার রক্ত বীজ রোপিত হয়েছিল।এক দিন তা মেঘের গর্জনে দিক-বিদিক কাঁপিয়ে উপমহাদেশের এই জনপদে স্বাধীনতার লাল সূর্য উদিত হয়েছিলো।যার বজ্র নিনাদে উপমহাদেশ কাঁপিয়ে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড প্রতিষ্ঠা পেলো তিনি হলেন বাঙালি জাতির আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দুনিয়া কাঁপিয়ে’৭১ এর ৭ মার্চ তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ অমর বজ্র কণ্ঠ ধ্বনি-প্রতিধ্বনিত হয়ে বাঙালি তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতীর রক্তের শিরায় শিরায় মুক্তির নেশা ধরিয়ে ছিলো। বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পরাধীনতার বক্ষ বিদীর্ণ করে স্বাধীনতার প্রদীপ্ত সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিলাম।
স্নরনাতীত কাল থেকে এই বাংলাদেশ বিপ্লবীদের জন্ম ভূমি। হাজার হাজার বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে এই বাংলায়, অনেকে শহীদ হয়েছে, অকাতরে আত্নাহুতি দিয়েছে। দেশ ও জাতির জন্য জীবন দিতে তারা কোন দিন কার্পণ্য করেনি। তারা এ চরিত্র পেয়েছে বাংলার প্রকৃতি থেকে। বাংলার প্রকৃতি তাদেরকে মায়ের মতো করে লালন পালন করে গড়ে তুলেছে। আগামী দিনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তাদের জীবনকে বীরের মতো বাজী রাখতে প্রস্তুত।
আমার এই জীবনের স্নৃতি গুলো হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা, আন্দোলন-সংগ্রাম ,যুদ্ধ-বিগ্রহ,অম্ল-মধুর ঝালে পরিপূর্ণ।স্নৃতির ঝাঁপি খুলে বসেছি আজ। সেই স্বপ্নের সোনালী দিন গুলো ধরে রেখেছি জীবনের গহীনে। আমার যৌবনের সোনাঝরা দিন গুলো কেটেছে ফাগুনের ঝরা পাতার মতো।যখন প্রেমের লুকুচোরি খেলার বয়স তখন আমি বুঝে না বুঝে রাস্তায় রাস্তায় শ্লোগান দিয়েছি আইয়ুব-মোনায়েমের বিরুদ্ধে। আমার প্রথম প্রেম হলো শ্লোগানের সাথে। বঙ্গবন্ধুকে না দেখেই ভালো বেসে ছিলাম। কল্পনায় আলপনা আঁকতাম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। তাঁর স্বপ্নের পিছনে পাগলের মতো ছুটে বেড়াতাম। স্কুল জীবনে সেই ‘৬৯,৭০ ও’৭১ এর প্রতিটি মূহুর্ত প্রতিটি দিন কেটেছে চরম উত্তেজনায়। সময় কোথায় কারো প্রেমের হাত ছানিতে নিজেকে জড়িত করার। মিছিলে মিছিলে সারা বাংলা উত্তাল সমুদ্রের গর্জনের মতো টাল-মাটাল। সমুদ্রের সেই গর্জন রুধিবে কার এমন শক্তি? চোখের সামনে ভেসে ওঠে আইয়ুব-মোনায়েমের পতন,’৭০ এর নির্বাচন, ‘৭১এর মুক্তি যুদ্ধ।
রাত দিন নির্বাচনী কাজে ছাত্র কর্মীদের ব্যস্হতা।যাকে না দেখে ভালো বেসে তার নামে শ্লোগান দিয়েছিলাম–সেই বঙ্গবন্ধুকে সারা বাংলার মানুষ একক নেতা হিসাবে রায় প্রদান করলো। চৈত্র মাসের মধ্যে গগণের সূর্যের প্রখরতাকেও হার মানায় বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তা। চারিদিকে আনন্দ-উল্লাস। কিন্তু না, সেই আনন্দ উল্লাসে বিষাদের কালিমা লেপন করলো পাকিস্তানি স্বৈর শাসক গোষ্ঠী।
লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম জিন্নাহ, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নকলা উপজেলা শাখা, শেরপুর।