৩০ জানুয়ারী হয়ে গেল শেরপুরের নকলা পৌরসভায় নির্বাচন।নির্বাচন নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের বহু পৌরসভা, বিশেষ করে দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চল। অবশ্য এ জায়গাগুলো সব নির্বাচনের সময়ই অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি উত্তপ্ত থাকে। এখন পর্যন্ত সংঘর্ষ যা হয়েছে, তা বিগত ২০১১ সালের পৌরসভা নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করলে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা বিগত নির্বাচন থেকে নিম্নগামী, যা ভোটারদের শঙ্কিত করে তুলেছিল।
দেশের বিভন্ন যায়গাতে গাড়ি পোড়ানো ও দোকান ভাঙচুরের মহা উৎসব ঘটনা ঘটলেও শেরপুরের নকলার চিত্র পুরো ভিন্ন।ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পুনরায় নির্বাচিত সফল মেয়র মো. হাফিজুর রহমান লিটন নৌকা প্রতিক পাওয়ার পরই বলেছিলেন নৌকার পাল যখন উঠে তখন কেউ সেটা থামিয়ে রাখতে পারবে না।সেটা প্রমানিত হলো গত ৩০জানুয়ারীতে।মেয়র লিটন বলেছিলেন আমরা উৎসব মূখর পরিবেশের নির্বাচন পৌরবাসীকে উপহার দিব। সেটাই হলো বাস্তবে।মানুষ এবার ঘর থেকে বের হয়েছে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল ইসলাম সেদিন বলেছিলেন আমাদের কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।ভোটের মাঠে আমাদের কোন প্রতিদ্বন্ধী নেই। এ নির্বাচনে নৌকার কোন প্রতিদ্বন্ধী নেই বা আমরা কাউকে প্রতিদ্বন্ধী মনে করি না। কারন পৌর সভার মানুষ নৌকা পাগল। সেটাও প্রমান হয়ে গেল গত ৩০ জানুয়ারীর নির্বাচনে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর ওপর হামলা, বিএনপির সমর্থক প্রার্থীর উপর হামলা, বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপরও হামলার ঘটনা ঘটলেও নকলাতে এর বিন্দু মাত্রও ঘটেনি। কারো প্রচারে ছিলনা কোন বাধা। সকল প্রার্থীই যার যার মত প্রচার-প্রচারনা চালিয়েছেন।তফসীল ঘোষনা হওয়ার পর থেকেই ছিল উৎসব মুখর পরিবেশ।
শেরপুর জেলা পুলিশের নির্দেশনা মোতাবেক নকলা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুশফিকুর রহমানের নেতৃত্বে থানা পুলিশ পৌর শহরের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে পুলিশী মহড়া চালিয়েছেন। এর পাশাপাশি বাহিরের কেউ যেন শহরে প্রবেশ করে বিশৃঙ্খলা যেন সৃস্টি না করতে পারে সেজন্য চালিয়েছেন অভিযান। বৃদ্ধি করেছের নজরদারী।থানা পুলিশের ভূমিকা ছিল বিশাল।নির্বাচনের মাঠকে স্বাভাবিক রাখতে দিন রাত কাজ করেছেন তারা। গত ৩০জানুয়ারী প্রমান করেছেন নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা কি। ভোটাররাও উৎসব মূখর পরিবেশে লাইনে দাড়িয়ে আনন্দের সহিত তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। অসুস্থ্য, পঙ্গু ভোটারও পুলিশের সহযোগিতায় লাইনে না দাড়িয়েও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। জনগনও পুলিশ উপর আস্তা রাখতে পেরেছেন। নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ রাখতে পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারীর ভূমিকাও ছিল প্রসংশনীয়।পৌর এলাকায় রেজিস্ট্রেশন বিহীন কোন যানবাহন (বিশেষ করে মোটসাইকেল) অবাধে প্রবেশ যেন করতে না পারে সেজন্য মাঠে কাজ করেছেন নকলা-নালিতাবাড়ির ট্রাফিক জোন।
সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী মিডিয়া। ইসিকে হতে হবে মিডিয়াবান্ধব এবং সহযোগিতা নিতে হবে তাদের কাছ থেকেও। অতীতে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া উভয়ই নির্বাচন কমিশনকে দারুণভাবে সহযোগিতা করেছিল।এবারও সহযোগিতা করেছে। মিডিয়া ব্যাক্তিরাও অবাধে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পেরেছে। তাদেরকেও সহযোগিতা করেছে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। নির্বাচনের ইতিবাচক ওনেতিবাচক দিক তুলে ধরতে মিডিয়ারা অবাধ বিচরণ করতে পেরেছিল।
উপজেলা প্রশাসন এ নির্বাচনকে ঘিরে মাঠে সব সময় কাজ করেছেন। আচরণ বিধি লঙ্গনের দায়ে জরিমানাও করেছিলেন কয়েক প্রার্থীকে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান গেল উপজেলা পরিষদের সুন্দর একটি নির্বাচন উপহার দিয়ে ছিলেন।তার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পৌরবাসীর দাবী ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন।মানুষকে ভোট কেন্দ্র গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে উৎসাহ প্রদান করতেও কাজ করেছেন তিনি। মানুষ যেন কেন্দ্র যেতে কোন ভয় না পায়। সেটা এবাও নিশ্চিত করেছেন তিনি। তাই মানুষও ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। মাঠে সবসময় তৎপর ছিলেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) কাওছার আহম্মেদ। কোন প্রার্থী বা তার সমর্থকরা যেন আচরণ বিধি লঙ্গন করতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃস্টি রেখেছেন তিনি।সংবাদ পেলেই ছুটে গেছেন ঘটনাস্থলে। পুলিশ বিভাগের সহায়তায় করেছেন জরিমানা।
একটি বলিষ্ঠ, শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই যে শুধু একটি সুষ্ঠু, অবাধ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারে, তেমনটি নয়। কারণ, এর সহযোগী শরিকদের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তবে একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের জন্য স্বাধীনচেতা ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন এবং স্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিকল্প নেই।
লেখক- সাংবাদিক শফিউল আলম লাভলু, (নকলা-শেরপুর)