দেশজুড়ে বয়ে যাচ্ছে গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ। প্রতিদিনই তাপমাত্রা বেড়েই চলছে। অস্বস্তিকর অগ্নিদহনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে মানুষ। অসহ্য গরমে নাজেহাল জীব-বৈচিত্র্য, মানুষ-জীবকূল। দিনে মাথার উপর তপ্ত সূর্য, আর রাতের বেলায় ঘরের ভেতর গরম বাতাসের ভ্যাপসা অনুভূতি, স্বস্তি নেই রাতে বা দিনে কোথাও, স্বস্তি নেই ঘরে বা বাইরে। বৈশাখের খরতাপে প্রাণ যেন যায় যায় অবস্থা। অস্বস্তিকর গরমের মধ্যেই শুরু হয়েছে দফায় দফায় লোডশেডিং। দুপুর, সন্ধ্যা, গভীর রাত কিংবা ভোর কোনো নিয়মই মানছে না বিদ্যুতের লুকোচুরি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে খুলনার জনজীবন। একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং, সীমাহীন দুই কষ্টের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে খুলনার মানুষ।
অপরদিকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
শনিবার রাত থেকে কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এই মেগা প্রকল্পের। বাংলাদেশ ইন্ডিয়া পার্টনারশিপ পাওয়ার কোম্পানি লি. (বিআইএফপিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গেল ১৪ই জানুয়ারি কয়লা সংকটে বন্ধ হয়েছিল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।
এদিকে হঠাৎ করে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহের উপর। খুলনাসহ এই অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ১৫ই এপ্রিল রাত থেকে কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারও উৎপাদন শুরু করা হবে।
কয়লা সংকট নেই দাবি করে তিনি আরও বলেন, বর্তমানে কেন্দ্রে পর্যাপ্ত কয়লা মজুদ রয়েছে। বেশকিছু কয়লা আমদানি করা হয়েছে। যা এখন পথে রয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমুদ্র পথে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এসে পৌছাবে।
নগরীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা সুমন বলেন, বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ যাচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যার পর বিদ্যুৎ চলে যায়। তারাবির নামাজের সময় আরেক দফা গেছে। রাতে আবার গেছে। তবে বেশি সময় বন্ধ থাকে না, চলে আসে। কিন্তু প্রচণ্ড এই গরমের মধ্যে বিদ্যুৎ ছাড়া থাকা দায় হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমে ফ্যান চালিয়েও ঘরে থাকা যায় না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ না থাকলে মনে হয় আজাব যেন শুরু হলো।
রিকশাচালক মকবুল হোসেন জানান, সূর্যের অনেক তাপ। রোদে সারা শরীর পুড়ে যায়। ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিকেল ৫টার পর থেকে গরম কিছুটা কম থাকে। সকাল ১০টার পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রচণ্ড তাপদাহ থাকে। মনে হয় যেন চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। শরীর ঘেমে যায়, শরীর দুর্বল হয়ে আসে। রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
নগরীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী রাশিদা বেগম জানান, বয়স হয়ে গিয়েছে। গরম সহ্য করতে পারি না। তারপর এই গরমে সব রোজা আছি। প্রচুর পানির তৃষ্ণা পায়। তারপর আবার বারবার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। বাইরে বাতাসও নেই, যে বাতাসে গিয়ে বসে থাকবো।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে তীব্র তাপদাহ বয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় বের হলে আগুনের ফুলকি যেন সোজা চোখে মুখে আঘাত করছে। যেন আগুনের হল্কা এসে গায়ে লাগছে। প্রয়োজন ছাড়া দিনের বেলা কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না। অবশ্য রাতে ঘরে ফিরেও স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। দফায় দফায় লোডশেডিংয়ে রাতেও ঘেমে ভিজে নাকাল হচ্ছে মানুষ। তাপমাত্রা আরও ২/৩ দিন অব্যাহত থাকবে। এরপর কিছুটা কমবে এবং দু-এক জায়গাতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকোর) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভারপ্রাপ্ত মো. শামসুল আলম বলেন, গরমের জন্য খুলনায় প্রায় এক হতে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের লোড বেড়েছে। বিগত দিনে বৈশাখ মাসে ঝড় বৃষ্টি হলে লোড বন্ধ থাকতো, কিন্তু এবার আবহাওয়া ভালো বৃষ্টি নেই। তাছাড়া রমজান মাস বলে শহরের প্রতিটি মসজিদে ও বাসা বাড়িতে রাতে এসির ব্যবহার হচ্ছে, এ কারণেই লোড বেড়ে গেছে। জেনারেশন কম নাই। লাইনের ক্যাপাসিটির কারণে কিছু কিছু জায়গায় লোডশেডিং হচ্ছে। তবে পরিমাণে কম বলে জানান তিনি।
